ইমানের পেছনে মেহনত করা, ইমানের হাকিকত বোঝা, সেই অনুযায়ী আমল করা আমাদের প্রত্যেকের পক্ষে অনেক সময় সম্ভব হয় না। কারণ আমরা মনে করি, দ্বীনদার হতে গেলে দুনিয়া ছাড়তে হবে। দুনিয়াদারির সঙ্গে দ্বীনদার হওয়া যায় না। এটা একটা ভুল ধারণা। আমি দুনিয়াদার হয়েও দ্বীনদার হতে পারি। দ্বীনদার হতে হলে দুনিয়া ছাড়তে হবে- এই শিক্ষা দ্বীনের কোথাও নেই। সূরা জুমায় বলা হয়েছে, 'হে লোক সকল! জুমার দিন যখন আজান হয়ে যায়, তোমরা বেচাকেনা ছেড়ে মসজিদে চলে যাও।' (সূরা জুমা : ৯) তাহলে দেখা যাচ্ছে, এই আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা মানুষকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে উঠিয়ে মসজিদের দিকে নিচ্ছেন। এই কথা বলেননি যে, তুমি ঘর থেকে বেরিয়ে মসজিদের দিকে চলে এসো। বোঝা গেল ঘরে অলস বা বেকার সময় কাটানো ইসলামের কাছে পছন্দনীয় নয়। অথবা সারাক্ষণ মসজিদে বসে থাকাও ইসলামের দাবি নয়। বরং ছেলে-সন্তান, স্ত্রী-পরিজন, বাবা-মা প্রমুখ যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তার ওপর বর্তায়, তাদের জন্য রিজিকের সন্ধান করতে হবে। আজানের আগ পর্যন্ত সময়টা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বা কর্মক্ষেত্রে কাটানোই ইমানের দাবি। তাই বলা হয়েছে, 'যখন নামাজ শেষ হয়ে যায় তখন ভূমিতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহতায়ালার দেওয়া রিজিকের সন্ধান কর।' (সূরা জুমা : ১০)। এই নয় যে, এক ওয়াক্তের নামাজ পড়েছি আরেক ওয়াক্তের নামাজের অপেক্ষায় আমাকে মসজিদে বসে থাকতে বলা হয়েছে। তবে হ্যাঁ, দুনিয়ার কাজে গিয়ে যেন আল্লাহতায়ালাকে ভুলে না যাই; বরং আল্লাহতায়ালাকে বেশি বেশি স্মরণ করি। আবার যখন মসজিদে আজান হয়ে যাবে তখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে মসজিদে আল্লাহতায়ালার দরবারে হাজিরা দিতে হবে। এর নামই হলো দ্বীন। সুতরাং দুনিয়ার সব কাজকর্ম বাদ দিয়ে সারা দিন দ্বীনের নামে ঘুরে বেড়ানোকে দ্বীন মনে করা হলেও তা আসলে দ্বীন নয়। বরং এর দ্বারা স্ত্রী-পরিজন, ছেলে-মেয়ে, বাবা-মার হক নষ্ট করা হয়। যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব আল্লাহতায়ালা আমার ওপর ন্যস্ত করেছেন, তাদের হকের প্রতি অবহেলা করা কবিরা গুনাহ। মনে রাখতে হবে, তাদের হক আদায় করাও দ্বীনের একটি ফরজ বিধান। সুতরাং ফরজকে উপেক্ষা করার কোনো অবকাশ নেই। আমরা যদি নবী রসুলদের জীবন নিয়ে গবেষণা করি তাহলে দেখতে পারব যে, তারা কখনোই দুনিয়াকে বাদ দিয়ে দ্বীন পালন করেনি। ইসলামের ভাষ্য হলো মানুষ শুধু তার ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও ভোগের জন্যই সম্পদ অর্জন করবে না ব্যক্তি ও পরিবারের প্রয়োজনের পর লক্ষ্য করবে অসহায় আত্দীয়, অভাবী প্রতিবেশী ও নিঃস্ব মানুষের প্রতি। যারা আয় করতে অক্ষম। সুতরাং যদি সমাজের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ দুনিয়ার শ্রম দেওয়া ও অর্জন করা ছেড়ে দিয়ে দ্বীনদার হওয়ার স্বপ্ন লালন করতে থাকে তাহলে সমাজের আর্থিক শৃঙ্খলা ভেঙে যাবে যেটা হবে মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য একটা বড় ধরনের বিপর্যয়। আমরা যেন নামাজকে না বলি যে কাজ আছে বরং কাজকে যেন বলি নামাজ আছে তাহলেই ব্যক্তি পরিবার সমাজ বিশ্বে আবার শান্তি ফিরে আসবে।