বাংলাদেশের জন্যে এটি নতুন কোনো বিষয় নয়। নদীর দেশে নদী থাকবে, নৌকা থাকবে নৌকা ভরতি মানুষ থাকবে আর নদীর বড় বড় ঢেউ এ নৌকা তলাবে... এমনটাই নিয়ম। এমনটিই হয়ে আসছে আদ্দিকাল থেকে। বিশ বছরের ইতিহাস বলে ,দেড় হাজার মানুষ নিখোঁজ হয়েছে এই নদী পথে চলতে গিয়ে। কোনো তদন্তেই কিছু হয়নি। দোষীর সাজা হয়নি, নৌপথে কড়া আইন প্রয়োগ করা হয়নি, লঞ্চের গাঠনিক পরিবর্তন করা হয়নি, ঘাটে ঘাটে ডিজিটাল কাউন্টার বসেনি, টিকেটের সুব্যবস্থা হয়নি, মালামাল রাখার জন্যে নিরাপদ জায়গা ও মানুষ বসবার জন্যে নিরাপদ জায়গা আলাদা হয়নি, মালিকদের লিস্ট আর তাদের চালকদের লিস্ট এর কোনো হার্ড কপি বা সফট কপি ফাইল করা হয়নি, লঞ্চের কাগজ পত্র যার কাছে জমা থাকে তার নৈতিক উন্নয়ন হয়নি, মেয়াদের তারিখ বা যন্ত্রের ত্রুটি দেখার ইঞ্জিনিয়ারেরও দায়িত্ব ঠিক হয়নি। ভরা মৌসুমে যখন নদী উত্তাল থাকে তখন পর্যবেক্ষণ ও যাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তা জোরদারের জন্যে যে কোনো বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে সেটা ২০ বছর আগেও যেমন ছিল না এখনো নেই।েতগুলো বছরেও কাজের কাজ কিছু হয়নি।আমার ছেলে বেলায় রেডিও কিংবা টেলিভিশনে লঞ্চ ডুবে যাওয়ার ধারনকরা চিত্র দেখতে গিয়ে উদ্ধারকারী যে জাহাজ দুটো দেখতাম... সেই হামজা আর রুস্তম দিয়েই এখনো উদ্ধারকাজ চলছে। বিশ বছরে আমরা বিশটা না হোক আরো ৫ টা অন্তত উদ্ধারকারী জাহাজ পেতে পারতাম। কিন্তু আমরা তা পাইনি। জনগন কিছু পায়না। তাই নদীর বড় বড় ঢেউ এ গাদাগাদী মানুষ সহ নোউকা ডুবে যাবে ... নিখোঁজ হয়ে যাবে এমনটাই নিয়ম...! আমরা এই বিশ বছরে চার বার সরকার বদল দেখেছি। সরকার বদল হলেই তাদের জন্যে বাড়ি, সংসদে পজিশন, ফোনের ব্যবস্থা আর গাড়ির বন্দোবস্ত হুড়মুড় করে হয়ে যায়। তার মূল্য দেয় লঞ্চে, স্টীমারে আর নৌকায় ডুবে যাওয়া এই মানুষেরাই। অথচ দেশের এক তৃতীয়াংশ লঞ্চে যাতায়াত করা এই সব মানুষকে গাদাগাদি করে সীট নিতে হয় লঞ্চে। কখনোবা দাঁড়িয়ে পার হতে হয় নদী। দেশে সড়ক পরিবহন মন্ত্রনালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রনালয় নামে দুটি চকচকে মন্ত্রনালয় রয়েছে। এখানকার হর্তা কর্তারাও পাজেরো গাড়ি সহ নামজাদা সব ব্র্যান্ডের গাড়ি চড়ে যাতায়াত করেন। পদ্মা পার হবার জন্যে তাদের কাউকে গাদাগাদি করে লঞ্চে চড়তে হয়না। তাই তারা ভুলে যান সেই সব নদীপথের মানুষের কথা। তাদের দূর্ভেগের কথা। নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয় কবার ফেরী ঘাট বা নদীর ঘাটে গিয়ে সেখানকার পরিবেশ উন্নয়ের জন্যে যানবাহনের উন্নয়নের জন্যে তদন্ত কমটি গঠন করে সেটা কারো জানা নেই। এই যে বার বার লঞ্চ ডুবে যায়, মানুষের বুক চাপড়ানো আহাজারি শুনে কখনো ব্লাক বেঙ্গল ছাগল কখনো মোট এক লাখ পঁচিশ হাজার টাকা দিয়ে দায়িত্ব অবহেলার রীতিকে বৈধ করবার অপচেষ্টা করা হয় এসব কি প্রমাণ করে না যে মানুষের আস্থা আর বিশ্বাস নিয়ে তারা ডাঙ্গুলি খেলছে...! মানুষের লাশ দিয়ে টিলা বানানোর পর তদন্ত না করে একটা সময় পর পর তদন্ত কমিটি গঠিন করে দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তাদের দায়িত্বপালনের ধরন যাচাই করলেই কিন্তু এ্ত মানুষের লাশ গুনতে হয় না প্রতিবার। আমরা বলতে পারি। বলা একধরনের অধিকারের মধ্যে পড়ে। সেটা হোক অযৌক্তিক কিংবা অবান্তর। দায়িত্ব এড়াতে কিংবা দায়িত্বে অবহেলার অপবাদকে ধামা চাপা দিতে ক্ষমতাবানেরা তাদের বলবার প্রথাকেই ব্যবহার করে এসেছেন এবং আসছেন। তারা কেবল বলেই যাচ্ছেন ... বলেই যাচ্ছেন...করছেন না কিছুই। আর আমরা সাধারণ মানুষেরা কেবল কাঁদছি আর কেঁদেই যাচ্ছি পাচ্ছি না কিছুই।
গতকাল পিনাক-৬ যার পুরো নাম এম এল পিনাক-৬ , ৩০০ জন যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় পদ্মায়। অথচ এর ধারণ ক্ষমতা ছিল ৮৫ জন। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ চলাচল কতৃপক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সব দেখে কিভাবে যাত্রীর নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে লঞ্চটি ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দিলেন সেটাই ভাববার বিষয়। লঞ্চটি দৈর্ঘেও ছিল মাত্র ৫২ ফুট।যেখানে কিনা ৬৫ ফুট লঞ্চের কম দৈর্ঘের কোনো লঞ্চের সেদিন চলবার অনুমতি ছিল না। লঞ্চের যান্ত্রিক মান নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। কাগজ পত্রের মেয়াদও শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে জানা গেছে। এত নেতিবাচক দিক থাকবার পরেও কিভাবে এই ধরনের লঞ্চ ঘাট ছেড়ে যায় ! এসব নিয়ে তদন্ত করে সময় নষ্ট করবার আসলে প্রয়োজন দেখছে না মানুষ।অপরাধটা কি অপরাধী কে বা কারা এখানে সেটা খুব স্পষ্ট।য়াইনের ফাঁক ফোঁকর গুলো বন্ধ করে এদের পাকড়াও করলেই এতগুলো মানুষের আসল খুনী ধরা পড়ে এবং শাস্তি পায়। শোনা যাচ্ছে লঞ্চটি নাকি বিরোধী দলের এক নেতার। এখন ঘটনা মোড় নেবে ভিন্ন দিকে। রাজনীতি তার ডাল পালা ছড়িয়ে মানুষের লাশের ুপর দিয়ে মই ডলে সামনে এগুবে। এরকমই হয় সবসময়। বাংলাদেশের জন্যে এটা নতুন কোনো বিষয় নয় সবার আগে তাই এই কথাটি বলে নিয়েছি। আমরা কাঁদতে জানি, ক্ষোভ প্রকাশ করতে জানি, অপবাদ দিতে জানি াবার জানি সব অনাচারকে ভুলে যেতে। ভোলা মনের মানুষদের এর চেয়ে বেশি কিছু ভাগ্যে জোটে না। বাড়ি যেতে গিয়ে জমের বাড়ি যে লঞ্চে চড়ে যেতে হয় সেই লঞ্চে শিক্ষিত লোক হয়ে নিজে এবং নিজের পরিবারকে কেন ঠেলে তুলব সেই প্রশ্ন নিজেকেই করতে হবে। যে জাতীর বিবেক নেই সে জাতীর বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে কোনো লাভ হবে না। একটি কথা মনে রাখতে হবে নিজেকেই নিজের বোঝাটি বহন করতে হয় সে বোঝা হোক ভালমন্দ বোধের কিংবা আপন জনের লাশের।
Meharub Moon
Chief Editor
tnews247.com