কলকাতার কালীঘাটের বাসিন্দা অহনা দাস। বয়স ৯ বছর। মা-বাবার সঙ্গে ঢাকায় বেড়াতে এসে হারিয়ে যায় সে। সৌভাগ্যক্রমে ওইদিনই রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে কান্নারত অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে এক পুলিশ সদস্য। এরপর তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে গাজীপুর কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন।
সেখান থেকে মঙ্গলবার ঢাকার শিশু আদালতে হাজির করা হয় অহনাকে। মহিলা আইনজীবী সমিতি তাকে নিজ জিম্মায় নিয়ে ভারতে পাঠানোর জন্য আবেদন করে। ঢাকার শিশু আদালতের বিচারক হাফিজুর রহমান ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় মহিলা আইনজীবী সমিতির কাছে অহনাকে জিম্মায় দিয়ে তাকে কলকাতায় পরিবারের কাছে ফেরত পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে অহনাকে নিজ দেশের প্রকৃত অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করে আগামী ১০ আগস্ট মহিলা আইনজীবী সমিতিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, অহনা কলকাতা থেকে ঢাকায় যাদের সঙ্গে এসেছে তারা তার জন্মদাতা নয়। ছোট থেকেই সে তাদের কাছে বড় হয়েছে।
এদিকে আদালতে কথা হয় বর্ষা পুজা অহনা দাসের সঙ্গে। সে বলে, কলকাতার কালীঘাটে আমার জন্ম। বাবার নাম বিকাশ দাস ও মায়ের নাম এনা দাস। দু’বছর আগে প্লেনে করে ঢাকায় আসি। এরপর আমি হারিয়ে যাই। তার বাবা-মা তার খবর নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে সে জানায়, না, আমার বাবা-মা আমার কোনো খবর নেয় না। একটু বড় হওয়ার পর থেকে তারা তাকে ভালোবাসত না।
তারপরও সে তার নিজ জন্মভূমি কালীঘাটেই ফিরে যেতে চায়। সেখানে তার আর কোনো আত্মীয়-স্বজন আছে কিনা জানতে চাইলে সে বলে, আমার কোনো আত্মীয় নেই। সেখানে কার কাছে যাবে জানতে চাইলে সে বলে, আমি আমার নিজের দেশ, নিজ জন্মভূমিতে ফিরে যেতে চাই।
তাকে ভারতে পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে মহিলা আইনজীবী সমিতির আইনজীবী ফাহমিদা আক্তার বলেন, আপনারা জেনে থাকবেন জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতিত নারী ও শিশুদের পাচার প্রতিরোধ করে আসছে।
তিনি বলেন, নির্যাতিত নারী-শিশুদের আশ্রয়, পুনরায় প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে থাকে মহিলা আইনজীবী সমিতি। ভিকটিম একজন নাবালিকা শিশু এবং ভারতীয় নাগরিক। পাচারের শিকার উদ্ধার করা নারী শিশুদের বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের কাজ করে থাকে। ভারতীয় পুলিশ ও হাইকমিশনের সঙ্গে সর্বাত্মক যোগাযোগ করে আমরা অহনাকে তার নিজ দেশে পাঠাতে চেষ্টা চালিয়ে যাব।
এ বিষয়ে কিশোর আদালতের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, দু’বছর আগে অহনা ঢাকায় আসে এবং সে হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাওয়ার পর সে একটি বাসায় কাজ করে। সেখান থেকে সে চলে আসে। পুলিশ তাকে খুঁজে পায়। এরপর তাকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে গাজীপুরের কোনাবাড়ীর কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর থেকে সেখানেই ছিল। এরপর তাকে দেশে পাঠাতে মহিলা আইনজীবী তাকে জিম্মায় চাইলে আদালত তাকে জিম্মায় দেন।
জানা গেছে, গত ২৪ মার্চ খিলক্ষেত থানার এসআই প্রীয়তোষ চন্দ্র দত্ত ফোর্সসহ ডিউটি চলাকালে বিকেলে সংশ্লিষ্ট থানাধীন নিকুঞ্জ-২ এর রাজউক ট্রেড সেন্টারের সামনে অহনাকে কান্নাকাটি করতে দেখে। তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে নাম-ঠিকানা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারে না। যার কারণে তার অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি পুলিশ। এরপর ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে থানায় নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে অহনাকে নিরাপদ হেফাজতের জন্য অস্থায়ীভাবে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার তেজগাঁওয়ে পাঠানো হয়। এরপর ২৮ মার্চ তাকে আদালতে হাজির করলে আদালত তাকে গাজীপুরের কোনাবাড়ির কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর থেকে অহনা সেখানেই ছিল।