রামেন্দু মজুমদার। জন্ম ৯ আগস্ট ১৯৪১ সাল। মঞ্চ নাটকের প্রতি দারুণ একটি ঝোঁক ছিল ছোট বেলা থেকেই এই গুনী অভিনেতার। আর এ জন্য শৈশব কাল থেকেই শিল্প-সাহিত্যের সাথে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
পড়াশুনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি একাধারে একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ত্ব, অভিনেতা ও একজন সফল সংবাদ পাঠক। মঞ্চ নাটকে অভিনয় করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি।
সম্প্রতি tnews247.com -কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি তার সাবলিল অভিব্যক্তি দিয়ে নিজের অনেক না বলা কথা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।
অভিনেতা ও অভিনয় শিল্পীর মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি?
- না, এটি আসলে একই কাজের দুটো নাম। যে গুনগুলোর সমন্বয়ে একজন অভিনয় শিল্পী তৈরি, তার সবগুলো মিলিয়েই অভিনেতা তৈরি হয়।
আপনি কি মনে করেন যে, যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার সুষ্ঠ হয়েছে?
- হ্যাঁ, সুষ্ঠ হয়েছে, কারন এই বিচার আন্তর্জাতিক রীতি এবং নীতিমালা মেনেই হয়েছে। আসামীপক্ষের আপিল করার সুযোগও রয়েছে, যেটা আর কোথাও নেই। এটাই প্রমাণ করে যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সুষ্ঠ তদন্তের ভিত্তিতে হয়েছে।
আপনাকে টিভি মিডিয়াতে আমরা খুব একটা পাইনা কেন?
-আমি আসলে মঞ্চ-নাটকেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এছাড়া সংবাদ পাঠ করায় আমি নিয়মিত। টিভি নাটকে আমার খুব একটা আগ্রহ নেই।
কোন নাটক গুলো মঞ্চ নাটকের মধ্যে বেশী প্রিয়?
-অনেক গুলোই প্রিয়, তবে তার মধ্যে দুইটি নাটক বেশি প্রিয়-
১। “মেরাজ ফকিরের মা", ২। ”দুই বোন”।
মুক্তিযুদ্ধকালীন কোন ঘটনা আমাদের জানান?
-আমি সক্রিয় আন্দলনে যুক্ত ছিলাম না। কিন্তু একজন যোদ্ধা বলতে যা বুঝায়, সেটুকু কাজ করবার চেষ্টা করেছি। যা মনে করি, বলবার জন্যে নয়। ওটা ছিল দেশ মাতৃকার জন্য আমার কর্তব্য।
জীবনে আপনার কোন স্মরনীয় ঘটনা আমাদেরকে বলুন।
- স্মরণীয় ঘটনার মধ্যে দুটো ঘটনা একেবারেই ভুলবার নয়।
১। সৌম্ভমিত্রের সাথে সাক্ষাৎ।
২। আইটি আই –এর বিশ্ব সভাপতি হয়ে প্যারিসে বিশ্ব নাট্যদিবসে বক্তৃতা দেয়া এবং সেখানে "অগাস্ত বোয়াল"-এর সান্নিধ্য লাভ।
আপনার যে চলচ্চিত্র গুলিতে অভিনয় করেছিলেন? সে গুলোর নাম আমাদের জানাবেন কি?
-আমার অভিনীত চলচ্চিত্র গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, তানভির মোকাম্মেলের "জীবন ঢুলি”, “হুলিয়া” এবং "লালন"।
কোন চরিত্রটি অভিনয় করার ইচ্ছা এখনো রয়ে গেছে?
- শেক্সপিয়রের জুলিয়েট সিজারের চরিত্র।
বাংলাদেশে শিল্পীদের চিকিৎসা এবং প্রয়োজনে অর্থ সহযোগিতা পাওয়ার জন্য কোন সমিতি কিংবা সংস্থা থাকা উচিৎ বলে কি আপনি মনে করেন?
-হ্যাঁ, অবশ্যই থাকা উচিৎ। বর্তমানে “শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট” সরকারের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে।। খুব শীঘ্রই এটি চালু হবে।
বর্তমান নাটকে নিয়ম উপেক্ষা করে বাংলা ভাষার যে ধরনের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে তা, বাংলা ভাষার মান ধরে রাখার পক্ষে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আপনি মনে করেন?
-ভাষা একটি চর্চার বিষয় পৃথিবীতে অনেক ভাষাই সঠিক চর্চার অভাবে হারিয়ে গেছে। আমরা আশা করি, সাহিত্যের মাধ্যমে আমরা আমাদের ভাষার ইতিহাস সমোজ্জ্বল রাখতে সক্ষম হব।
বর্তমান নাট্যকারদের সম্পর্কে কিছু বলুন?
- অর্থপূর্ন জীবনযাত্রার সাথে মিলিয়ে, বিষয়বস্তু দিয়ে সমকালকে ধরবার চেষ্টা করুন এবং ঐতিহ্যের প্রতি অনুগত থাকুন।
জীবনে কোন অপূর্ণ ইচ্ছা আছে কি যা পূরন হলে আপনি সবচেয়ে বেশী খুশি হবেন?
-আমাদের একটি থিয়েটার স্কুল আছে, “ আব্দুল্লাহ আল মামুন থিয়েটার স্কুল”। এই স্কুলের জন্য একটি বাড়ি করার ইচ্ছা আছে। এটি হয়ে গেলেই হয়।
সাধারণ দর্শকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?
-ভাল নাটকের দর্শক হোন।
বুদ্ধিজীবী হত্যার পর কিছু মহান মানুষ বাংলাদেশকে গৌরবের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন। তাঁদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা, গাম্ভির্য এবং নৈতিকতার কাছে যুগে যুগে আমরা ঋণী হয়ে আছি। এই মহৎ মানুষেরা তাঁদের ঋণের শোধ চান না।
তারা চান আমরা যেন দেশকে ভালবেসে, দেশের জন্য বাঁচি, দেশের হয়ে বাঁচি।
শ্রদ্ধেয় রামেন্দু মজুমদার সেইসব অনুকরনীয়, অনুসরনীয় এবং বরণীয়দের একজন। tnews247.com-এর পক্ষ থেকে এই সুন্দর সুশীল মহাপ্রাণকে জানাই অফুরন্ত শুভেচ্ছা। উনি সুস্থ থাকুন, উনার সকল পূর্ণ হওয়া ইচ্ছে নিয়ে উনি কাজ করে যান। উনার চির তারুণ্যের ছোঁয়া পেয়ে তরুণ হয়ে উঠুক নতুনেরাও ।এই কামনায় শেষ করছি।